
শহরের কোলাহল আর আধুনিক জীবন থেকে বহু দূরে, ইন্দোনেশিয়ার বাজাউ (Bajau) নামক একদল মানুষ বাস করেন, যাদের জীবন আবর্তিত হয় সাগরকে ঘিরে। তাদের প্রায় পুরো জীবনটাই কাটে নৌকা বা পানির উপর বিশেষভাবে তৈরি করা ঘরে। এজন্যই তাদের “Sea Nomads” বা “সাগর যাযাবর” বলা হয়।
ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপের কাছে বসবাসকারী এই সম্প্রদায়ের মানুষ মাছ ধরা, রান্না, ঘুম, এমনকি পরিবার পালন—সবই করেন পানির উপরে। তারা কেবল বিশেষ প্রয়োজনে মাঝে মাঝে ডাঙ্গায় পা রাখেন।
বাজাউদের কিছু অবিশ্বাস্য শারীরিক দক্ষতা রয়েছে যা তাদের এই জীবনযাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করেছে।
তারা কোনো রকম অক্সিজেন ট্যাংক বা আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই পানির অনেক গভীরে ডুব দিতে পারেন। অনেকেই এক শ্বাসে কয়েক মিনিট পর্যন্ত পানির নিচে থাকতে পারেন এবং ৬০ ফুটেরও বেশি গভীরে ডুব দেন। এই দক্ষতা তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে অর্জন করেছেন।
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, সাধারণ মানুষের তুলনায় “বাজাউদের প্লীহা (spleen)” জন্মগতভাবে বড় হয়। প্লীহা হলো অক্সিজেনযুক্ত লোহিত রক্তকণিকার একটি ভান্ডার। ডুব দেওয়ার সময় তাদের দেহ এই অতিরিক্ত রক্তকণিকাগুলো ব্যবহার করে, যা তাদের বেশিক্ষণ শ্বাস ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটি বিবর্তনের এক দারুণ উদাহরণ!
শুধু তাই নয়, পানির নিচে তাদের দৃষ্টিশক্তিও সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত। বছরের পর বছর ধরে সাগরের গভীরে দেখার ফলে তাদের চোখকে বিশেষভাবে অভিযোজিত করেছে।
তাদের কাছে সাগরই জীবন, সাগরই জীবিকা এবং সাগরই তাদের পরিচয়ের মূল ভিত্তি। আধুনিকতার ছোঁয়া ধীরে ধীরে তাদের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করলেও, বাজাউরা আজও তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করে চলেছেন।
মানুষ কীভাবে প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে, বাজাউ সম্প্রদায় তার এক জীবন্ত উদাহরণ।