
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর দর্শনা-জগতি অংশে ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপনের মধ্য দিয়ে দেশে শুরু হয় ট্রেন চলাচল। এরপর সময় গড়িয়েছে বহু, যাত্রা শুরুর দেড়শ বছরেরও বেশি সময় পর এসে বর্তমানে দেশের ৬৪টির মধ্যে ৪৩ জেলায়ই রয়েছে রেল যোগাযোগ। যদিও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল নামে দুটি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত, এর মধ্যে ৩৯টি জেলার রেলপথেই রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা। রেলের মান নষ্ট হওয়া, লাইনে পর্যাপ্ত পাথর না থাকা, মাটি সরে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের প্রায় অর্ধেক রেললাইনই ঝুঁকিতে রয়েছে। খোদ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের করা এক সমীক্ষায় এমন চিত্র উঠে এসেছে। এ ছাড়াও রেলের ইঞ্জিনের (লোকোমোটিভ) মান ভালো না থাকা, বেহাল কোচের (বগি) কারণেও ভুগতে হচ্ছে। এ মুহূর্তে রেলে চলমান বেশিরভাগ ইঞ্জিন, বগি ও রেললাইনের মেয়াদ নেই। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ অচলের বোঝা বয়ে চলছে রেল।
যাত্রাপথে ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় বিকল্প ইঞ্জিন এনে ট্রেনে সংযুক্ত না করা পর্যন্ত ট্রেন থেমে থাকছে। মাঝপথে ট্রেনের ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো কখনো বিকল্প ইঞ্জিন না পেলে বিকল ইঞ্জিনই সারিয়ে আবার যাত্রা করতে হচ্ছে। এতে কখনো এক ঘণ্টা, আবার কখনো দু-তিন ঘণ্টা বিলম্ব হচ্ছে গন্তব্যে পৌঁছতে। এতে একদিকে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন, অন্যদিকে ট্রেনের সময়সূচি ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে; যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে রেলওয়ের যাত্রীসেবায়। ঘন ঘন ইঞ্জিন বিকল, ট্রেন বাতিল, সময়মতো না চলা এবং যাত্রীসেবার নিম্ন মান—এসব মিলিয়ে দেশের রেল খাত যেন এখন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবি।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি রেলপথ দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রেল ট্র্যাকের মান ভালো না থাকায় লাইনচ্যুতের ঘটনা বাড়ছে। বাড়ছে ইঞ্জিন বিকলের সংখ্যাও। সেইসঙ্গে দুর্ঘটনার জন্য অনেক সময় সাংকেতিক জটিলতা এবং মানুষের ভুলও দায়ী। রেলের মান ও লাইনের অবস্থা যাচাই করতে রেলওয়ের পক্ষ থেকে করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সারা দেশে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার রেললাইন ও রেলপথের অবস্থা খারাপ।
জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান কালবেলাকে বলেন, ‘রেলের অবস্থা খুবই খারাপ এটা সত্য। অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প চালু থাকলেও প্রয়োজনীয় কাজগুলো করা হয়নি। আমরা এখন পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নিচ্ছি। ধীরে ধীরে সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য বলছে, সারা দেশে এখন রেলপথ আছে তিন হাজার ৯৩ কিলোমিটার। আর রেললাইন আছে চার হাজার ৪৩৮ কিলোমিটার। দেশের রেলওয়ে ব্যবস্থা দুই অঞ্চলে বিভক্ত। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলের ১৬ জেলায় সমস্যা বেশি। এই অংশে ১৫০ কিলোমিটার রেললাইন পুরোপুরি নতুন করে করতে হবে। ৪০০ কিলোমিটার পথে রেল (লোহার পাত) পরিবর্তন করতে হবে। প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথে পরিবর্তন করতে হবে স্লিপারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম। পূর্বাঞ্চলের রেলপথে পাঁচ লাখ কিউবিক মিটার পাথরের ঘাটতি রয়েছে।
রেলপথের এমন বেহাল দশায় ট্রেনের ইঞ্জিনসহ বগি লাইনচ্যুত যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ গতকাল সোমবারও পাবনায় লাইনচ্যুত হয় যাত্রীবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনসহ দুটি বগি। এদিন ভাঙ্গুড়া স্টেশনে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ বেশ কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকে। ভোর ৫টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভাঙ্গুড়া স্টেশনে পৌঁছলে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে দুর্ঘটনাস্থলের আগে ও পরের দুই পাশের স্টেশনগুলোতে আটকে পড়া বেশ কয়েকটি ট্রেনের শত শত যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন। খবর পেয়ে ঈশ্বরদী থেকে উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করে। জানা গেছে, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভাঙ্গুড়া স্টেশনের সিগন্যাল অনুযায়ী অপরদিক থেকে আসা ঢাকাগামী একটি ট্রেনকে সাইড দিতে ভোরে ভাঙ্গুড়া স্টেশনের লুপ লাইনে দাঁড়ায়। ঢাকাগামী ট্রেনটি চলে যাওয়ার পর সিগন্যাল অনুযায়ী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনটি গন্তব্যের দিকে রওনা হয়। কিন্তু লুপ লাইন থেকে মেইন লাইনে উঠতে গিয়ে ইঞ্জিনসহ ট্রেনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
অবশ্য এ দুর্ঘটনার জন্য ট্রেনের চালককে দায়ী করেন ভাঙ্গুড়া স্টেশন মাস্টার মো. আরিফুল ইসলাম। তিনি গনমাধ্যমকে বলেন, ‘পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের ড্রাইভার (চালক) সিগনাল অমান্য করে ট্রেনটিকে দ্রত গতিতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে লুপ লাইন থেকে প্রধান লাইনে উঠেতেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।’
রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. হাসিনা খাতুন জানান, ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় উদ্ধারকাজ চলার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
রেলের নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পূর্বাঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও ঢাকায় রেলপথে এসব সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, ছাগলনাইয়া, ফেনী, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা সদর, লাকসাম, চাঁদপুর সদর, ব্রাহ্মণপাড়া, বুড়িচং, কসবা, আখাউড়া, আশুগঞ্জ, ভৈরববাজার, নরসিংদী, টঙ্গী, ঢাকা সিটি করপোরেশন, কুলাউড়া, সিলেট সদর, ছাতক, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন, জামালপুর সদর ও গৌরীপুর এলাকায় জটিলতা বেশি।
অন্যদিকে রেলের পশ্চিমাঞ্চলে রাজশাহী, ঢাকা, রংপুর ও খুলনা বিভাগের ২৩ জেলায় সমস্যা বেশি। সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ায় সংস্কারকাজ করতে হবে। এই পুরো অংশে প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার রেললাইনের অবস্থা ভালো নয়।
ইঞ্জিন ও বগি সংকটের মধ্যে যেগুলো দিয়ে কোনো রকমে কাজ চলছে, সেগুলো মেরামত ব্যবস্থাও তেমন ভালো নয়। রেলের কারখানায় দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। পর্যাপ্ত বরাদ্দও নেই। বর্তমানে মিটারগেজ লোকোমোটিভের সংকট প্রকট আকার নিয়েছে। ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ মিটারগেজের প্রাপ্যতা আর ব্রডগেজে মেলে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ। ১৫৩টি মিটারগেজের মধ্যে ১০৩টি এবং ব্রডগেজ লোকোমোটিভের হোল্ডিং ১২৮টির মধ্যে ৩২টির মেয়াদ নেই। আয়ুষ্কাল পাড় হওয়ার পরও এগুলো ব্যবহার করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।
পুরোনো ইঞ্জিনের সক্ষমতা কম থাকায় প্রায়ই বিকল হচ্ছে। এসব ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশের ৯০ শতাংশের বেশি বৈদেশিক উৎস থেকে সংগ্রহ করতে হয়। পুরোনো ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় না। এ কারণে ভারী মেরামত বন্ধ রয়েছে। আবার মেরামত কারখানাগুলো আধুনিক নয়। রেলের বহরে থাকা তিন হাজার ও ছয় হাজার ৬০০ সিরিজের ইঞ্জিনগুলো অত্যাধুনিক। কিন্তু এগুলোর জন্য দক্ষ জনবল ও যন্ত্রাংশ নেই। যান্ত্রিক বিভাগে ১ হাজার ৪২৮টি পদের মধ্যে ৯৪৮টি শূন্য।
এক প্রশ্নের জবাবে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন গনমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা যন্ত্রাংশ ফেল করা, লোকবল সংকট। ইঞ্জিনের সমস্যায় বেশি ভুগছি। ইঞ্জিনের পার্টস (যন্ত্রাংশ) কেনা দরকার, বাজেট দরকার। আরও কিছু জনবল নেওয়া গেলে প্রাথমিক সংকট সামলানো যাবে।’
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংকটের পরিস্থিতি সামাল দিতে যেসব পথে যাত্রী কম, সেখান থেকে ট্রেন কমিয়ে আনা দরকার। আর ইঞ্জিন ও লোকবলের সংকটে ট্রেনে বগির সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না। এখন বেশিরভাগ ট্রেনে গড়ে ১২টি বগি থাকে। এ সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। আবার পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
রেলওয়ের তথ্য বলছে, বর্তমানে রেলে মোট ১৪০টি ইঞ্জিন রয়েছে। যার মধ্যে ৬০টি অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। আবার প্রয়োজনের তুলনায় ঘাটতির মধ্যে প্রতিদিনই কয়েকটি করে ইঞ্জিন বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটছে।
এদিকে কোচ সংকটের মধ্যে ৯২৭ কোটি টাকায় ২০০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী কোচ কেনার একটি প্রকল্প বাতিল করেছে রেলওয়ে। চীনের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে এ কোচগুলো কেনার কথা ছিল। কিন্তু ঋণের শর্ত অসামঞ্জস্যপূর্ণ উল্লেখ করে এ থেকে সরে এসেছে রেল কর্তৃপক্ষ। এখন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ৩২৮ কোটি টাকার অন্য একটি প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামছুল হক গনমাধ্যমকে বলেন, ‘রেলে রোলিং স্টোকের ভয়াবহ সংকট রয়েছে। এখন আধুনিক প্রযুক্তির রোলিং স্টোক তৈরি হচ্ছে। এগুলো পরিচালনা করার মতো উন্নত প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ আমাদের জনবলের নেই। আর রক্ষণাবেক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে আমাদের কোনো মনোযোগ নেই। আমরা শুধু কেনাকাটায় মনোযোগী। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না হলে যা আছে তাও টিকবে না, নতুন যা আসবে তাও ভালো থাকবে না।’
প্রতিবেদনটিতে তথ্য দিয়েছেন ভাঙ্গুড়া (পাবনা) প্রতিনিধি আব্দুর রহিম ট্রেন দুর্ঘটনার ৮৫ শতাংশই লাইনচ্যুতিতে: দেশে যাত্রাপথের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত রেলপথেও বাড়ছে দুর্ঘটনা। একই সঙ্গে বাড়ছে চলন্ত ট্রেনের বগি বা ইঞ্জিনসহ বগি লাইনচ্যুতের ঘটনা। সর্বশেষ গতকাল পাবনার ভাঙ্গুড়ায়সহ চলতি মাসে দেশের বেশ কয়েকটি রেলপথে ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে। যার মধ্যে অন্তত পাঁচটি ঘটনায় রাজধানী ঢাকার সঙ্গে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ট্রেন দুর্ঘটনার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে লাইনচ্যুতির ঘটনা সামনে আসছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোট ট্রেন দুর্ঘটনার ৮৫ শতাংশই লাইনচ্যুতির কারণে হচ্ছে।
সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরের দুর্ঘটনার তথ্য আছে পরিসংখ্যান দপ্তরে। ওই পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোট ৭৯টি দুর্ঘটনার মধ্যে ৬৭টিই ঘটে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে। অঙ্কের হিসাবে এটা ৮৪.৮১ শতাংশ। এরপর থেকে গত তিন অর্থবছরে রেল থেকে আর কোনো চূড়ান্ত পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়নি।
ওই অর্থবছরের দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ট্রেন চলার সময় বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় ১২ বার দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ৫.০৬ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। আর ৩৯.২৪ শতাংশ দুর্ঘটনা মানুষের ভুলের জন্য হয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে ১২ বছরে রেললাইনে ২ হাজার ৬০১টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ট্রেনের চলার পথে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার দুর্ঘটনা ২৫৮টি। এসব দুর্ঘটনায় ৩৪৩ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ট্রেনের যাত্রী ৩২ জন, রেলের কর্মী ৪৩ জন। বাকি ২৬৮ জন ট্রেনের আরোহী নন। অর্থাৎ দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া অন্তত সাড়ে তিন গুণ মানুষ ট্রেনের আরোহী নন।
রেলওয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মোটা দাগে ট্রেন দুর্ঘটনা মানেই হয় লেভেলক্রসিংয়ে অন্য কোনো যানের সঙ্গে সংঘর্ষ হওয়া বা ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়া। লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আসলেই রেলের বড় কিছু করার নেই। কিন্তু লাইনচ্যুতি কমাতে রেলের মান ঠিক রাখা, রক্ষণাবেক্ষণ ও সাংকেতিক ব্যবস্থার ওপর আরও জোর দিতে হবে।
দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে সারা দেশে মোট ৩৪৭টি রেলপথ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩২৪ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত আরও ২৭৭ জন।
সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান গনমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা শুধু সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত খবরের তথ্যের ভিত্তিতে দুর্ঘটনার প্রতিবেদন তৈরি করি। বাস্তবে দুর্ঘটনা আরও বেশি হয়। ছোট দুর্ঘটনাগুলো খবরে আসে না। আর দুর্ঘটনার জন্য সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে রেলপথের অবকাঠামো ঠিক না থাকা।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শামছুল হক গনমাধ্যমকে বলেন, ‘উন্নয়ন বলতে আমরা শুধু অবকাঠামো নির্মাণকেই বুঝি। তাই দুর্ঘটনার মাত্রা বাড়ছে। অথচ উন্নয়নের মূলমন্ত্র হচ্ছে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণে জোর দেওয়া। সেটি হচ্ছে না।’
সূত্র : কালবেলা











