বিভিন্ন ঘটনার ধারাবাহিকতা পর্যালোচনায় পুলিশ দেখতে পেয়েছে, চালককে হত্যার পর চক্রের তৃতীয় দলটি পৌঁছে গাড়ির কাছে। তারা গাড়ির রং ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম পরিবর্তন করে সেটি বিক্রি করে দেয়। বিক্রির পর অর্ধেক টাকা যায় দ্বিতীয় দলটির কাছে, বাকি টাকা চক্রের অন্যান্য সদস্য ভাগ করে নেয়। আবার একটি অংশ ছিনতাইয়ে নিজের স্ত্রী বা নারী আত্মীয়দের কাজে লাগায়। রাত হলে ওত পেতে থাকা নারী ইজি বাইক ভাড়া নেয়। চুক্তি অনুয়ায়ী তারা ইজি বাইক চালককে ছিনতাইকারীর অবস্থান পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। পরে তাদের কমিশন নিয়ে সটকে পড়ে।
এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া ইজি বাইক চালক মনির হোসেন জানান, এক মাস আগে রাত ১০টায় কাঞ্চন থেকে মধ্যবয়সী এক নারী তাঁর গাড়িতে ওঠেন। ওই নারী তাঁকে পূর্বাচলের ৯ নম্বর সেক্টরে নিয়ে যেতে বলেন। পূর্বাচলে ঢোকার পর দূর থেকেই কয়েকজন যুবককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মনিরের সন্দেহ হয়। পরে তিনি ওই নারীকে গাড়ি থেকে নেমে যেতে বললে নারী যাত্রীটি চিৎকার শুরু করে। ওই সময় যুবকরা এগিয়ে আসতে থাকলে মনির নারীকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে দ্রুত ইজি বাইক চালিয়ে প্রাণে রক্ষা পান।
প্রায় এক মাস আগে রূপগঞ্জের নগরপাড়ার আমজাদ হোসেনকে অজ্ঞান করে তাঁর কাছ থেকে ইজি বাইক নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। আমজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা আমার সব শেষ কইরা দিছে। মালিককে ধার করে ৬০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এখন কেস (মামলা) কইরা কী অইব?’
ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত ছয়জন ইজি বাইক চালকের পরিবারের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, কেউ ঋণ নিয়ে, কেউ হালের বলদ, কেউ স্বর্ণ বিক্রি করে ইজি বাইক কিনেছিলেন। কেউ কেউ পরিবারের শেষ সম্বল জমি বিক্রি করেও কিনেছিলেন। ইজি বাইক ছিনতাই হওয়ায় তাঁরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ২০২২ সালের ১৭ মে নিহত তারাব পৌরসভার নোয়াপাড়ার ইজি বাইক চালক কুরবান আলীর বাবা নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘মামলা তো করছিলাম। কী অইব? কিছুই অইব না। পুত (ছেলে) গেছে, পুত কি আর ফিরা পাইমু (পাব)।’
২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের নিহত চালক রজ্জব আলীর ছেলে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘কী দোষ আছিল আমার বাবার? শুধু গাড়িটা নিয়া নিতে পারত। আমাগো ক্যান এতিম কইরা দিল?’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত আট বছরে যে ৬৩ জন ইজি বাইক চালক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তার মধ্যে দুটি ঘটনার বিচার হয়েছে। বেশ কিছু হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তার করা হলেও আসামিরা জামিনে বেরিয়ে এসেছে। নারায়ণগঞ্জ আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে রূপগঞ্জের আধুরিয়ায় ইজি বাইক চালক হাদী দাউদ হত্যা মামলার রায় গত ১১ মার্চ প্রদান করেছেন আদালত। রায়ে ছিনতাইকারী লতিফ, রতন, আউয়াল ও শহীদুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক হুমায়রা তাসমিন। ২০২০ সালের ২৯ মার্চ আড়াইহাজার উপজেলার মারুয়াদীর ইজি বাইক চালক জামান মিয়া হত্যা মামলায় গত ১৪ মে আদালত রায় দেন। রায়ে আক্তার হোসেন, সাইফুল ইসলাম ও বাদশা মিয়াকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ শামীম আজাদ।