সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা আপন দুই ভাইয়ের নেতৃত্বাধীন দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাতে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের আষাড়িয়ারচর গ্রামে এ ঘটনায় অন্তত ১২টি বাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। এ ঘটনায় অন্তত ৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আষাড়িয়ারচর এলাকার শিল্পকারখানায আধিপত্য নিয়ে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রউফ ও উপজেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মো. জলিলের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। সম্পর্কে তারা আপন দুই ভাই। বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও মারামারির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে রউফ গ্রুপের লোকজন জলিল গ্রুপের অনুসারীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। এতে জাতীয় পার্টির নেতা সারোয়ার হোসেন ও মোক্তারের বাড়িসহ অন্তত ১২টি বাড়ি পুড়ে যায় এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে সোনারগাঁ ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে তাদের কাজেও রউফের সমর্থকরা বাধা সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আব্দুর রউফ হামলার কথা অস্বীকার করে বলেন, “জলিল ও তার লোকজন গত রাতে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর ও মারধর করে।
অন্যদিকে মো. জলিল অভিযোগ করে বলেন, “রউফের লাঠিয়াল বাহিনী আমাদের ওপর পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, মালামাল লুট করেছে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ৫ আগস্টের পর আঃ রউফ লুটপাট, চাঁদাবাজী ও অবৈধ গ্যাস বানিজ্য শুরু করে। এতে তারই ছোট ভাই বাধা দিলে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। গত মাসে তিতাস কর্তৃপক্ষে আঃ রউফের অবৈধ চুনা কারখানা গুড়িয়ে দেয়। এতে মো. জলিলের উপর ক্ষিপ্ত হয় আঃ রউফ। রউফের ধারনা তারই ছোট ভাই জলিল ষড়যন্ত্র করে তার অবৈধ কারখানা গুড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়াও এলাকায় কম্পানীর মেইল কারখানা থাকায় দুই ভাইয়ের মধ্যে আধিপত্য নিয়েও উত্তেজনা বিরাজ করছিল বলে জানায় স্থানীয়রা।
সোনারগাঁ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা বলেন, “আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি, তবে কিছু সময় আমাদের কাজে বাধা দেওয়া হয়। আমরা সাধ্যমতো ছোটাছুটি করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছি।
ঘটনাস্থলে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন জানান, “পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দুই গ্রুপের প্রধান আব্দুর রউফ ও জলিলকে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷
এ ঘটনায় এলাকায় এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।