আন্দামান সাগরে রোহিঙ্গাদের ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ভারতের বিরুদ্ধে

 

ভারতের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ তুলেছেন নিপীড়িত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। তাঁদের দাবি, দিল্লি থেকে আটক করে নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে সমুদ্রে ফেলে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৪০ জন রোহিঙ্গা এ ধরনের অভিযোগ করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জাতিসংঘ এ ঘটনাকে রোহিঙ্গাদের জীবনের জন্য “চরম ঝুঁকি” বলে আখ্যায়িত করেছে।

রোহিঙ্গা নুরুল আমিন জানান, গত ৯ মে দিল্লি থেকে তাঁর ভাই খাইরুলসহ পরিবারের চারজন নিখোঁজ হন। পরে জানতে পারেন, তাঁদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে তাঁদের ভবিষ্যৎ কার্যত অনিশ্চিত। নুরুল আমিন বলেন, “আমার বাবা-মা ও স্বজনেরা যে যন্ত্রণার ভেতর আছেন, তা কল্পনাও করতে পারিনি।”

তিন মাস পর বিবিসি ওই রোহিঙ্গাদের খুঁজে পায় মিয়ানমারে। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিরোধ গোষ্ঠী বাহটু আর্মির কাছে। সেখানে এক রোহিঙ্গা সৈয়দ নূর বলেন, “আমরা এখানে নিরাপদ নই, এলাকা পুরোপুরি যুদ্ধক্ষেত্র।”

ভুক্তভোগীদের বর্ণনায় জানা যায়, দিল্লি থেকে প্রথমে তাদের বিমানে করে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপে নেওয়া হয়, সেখান থেকে বাসে করে নৌবাহিনীর জাহাজে। চোখ ও মুখ বেঁধে, হাত প্লাস্টিকের বাঁধনে আটকে একে একে ছোট নৌকায় নামিয়ে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়। যদিও লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাঁতরে তীরে উঠে স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় বেঁচে যান তারা।

জন নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, “আমাদের বন্দির মতো বেঁধে জাহাজে তোলা হলো, তারপর একে একে সমুদ্রে ফেলে দিল।” অনেকে মারধরের শিকারও হয়েছেন বলে দাবি করেন। ফয়াজ উল্লাহ তাঁর হাতে আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, “আমাকে চড়-ঘুষি আর লাঠি দিয়ে মারা হয়েছিল।”

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক টমাস অ্যান্ড্রুজ জানিয়েছেন, এ ঘটনার “গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ” তাঁর কাছে রয়েছে এবং তা ভারতের মিশন প্রধানকে জমা দেওয়া হলেও কোনো জবাব মেলেনি।

জাতিসংঘের হিসেবে বর্তমানে ভারতে প্রায় ২৩ হাজার ৮০০ রোহিঙ্গা নিবন্ধিত আছেন, যদিও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে প্রকৃত সংখ্যা ৪০ হাজারেরও বেশি। দেশটি রোহিঙ্গাদের শরণার্থী নয়, বরং “অবৈধ অভিবাসী” হিসেবে চিহ্নিত করে।

এদিকে নুরুল আমিন ও তাঁর এক আত্মীয় ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রোহিঙ্গাদের নির্বাসনে পাঠানো বন্ধ ও ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছেন। তবে আদালতের এক বিচারপতি অভিযোগগুলোকে “অবাস্তব কল্পনা” বলে মন্তব্য করেছেন। মামলার পরবর্তী শুনানি নির্ধারিত হয়েছে ২৯ সেপ্টেম্বর।

নুরুল আমিন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “আমাদেরও যে কোনো সময় ধরে নিয়ে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হতে পারে। এখন আমরা ঘর থেকে বের হতেও ভয়ে আছি।”

সূত্র: বিবিসি।

জাতীয়

সারাদেশ

আন্তর্জাতিক

বিনোদন

খেলা

ডাকদূত – বিজ্ঞাপন – সার্কুলেশন শর্তাবলি ও নীতিমালা – গোপনীয়তা নীতি – যোগাযোগ – নিউজলেটার