ঢাকার মেট্রোরেলে সবচেয়ে বেশি যাত্রী ওঠে মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন থেকে। চালুর পর এই স্টেশন থেকে পৌনে দুই কোটির বেশি মানুষ মেট্রোরেলে যাতায়াত করেছে। আর মেট্রোয় সবচেয়ে বেশি যাত্রী উঠেছে গত ফেব্রুয়ারিতে, বইমেলার মাসে।
এর বাইরে এক কোটির বেশি যাত্রীর তালিকায় রয়েছে উত্তরা উত্তর, মতিঝিল, আগারগাঁও, কারওয়ান বাজার ও বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশন। আর সবচেয়ে কম যাত্রী যাতায়াত করেছে উত্তরা দক্ষিণ ও বিজয় সরণি স্টেশন থেকে।
মিরপুরে যাত্রী বেশি হওয়ার বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মেট্রোরেলের এই পথটি খুবই ব্যস্ত এলাকার ওপর দিয়ে গেছে। ফলে যাত্রী বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন, মেট্রোরেল আরও ঘন ঘন চালানোর বিষয়ে কাজ চলছে। ভবিষ্যতে আরও যাত্রী বাড়বে।
ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, পল্লবী ও উত্তরা মধ্য স্টেশনের মাঝামাঝি উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের আশপাশে বাসাবাড়ি খুব বেশি নেই। এখানে যাত্রী কম হওয়ার এটি একটি কারণ। আর মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে বিজয় সরণি স্টেশনকে যুক্ত করার তেমন কোনো গণপরিবহন নেই। এই স্টেশনের যাত্রী কম হওয়ার এটি একটি কারণ।
ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু হয়। ডিএমটিসিএলের তথ্য বলছে, উদ্বোধনের পর থেকে গত জুন পর্যন্ত ১৫ কোটি ৭৫ লাখের মতো যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করেছে। শুরুতে মেট্রোরেল সীমিত আকারে চলেছে। সব স্টেশনে যাত্রী ওঠা-নামা শুরু হয় ২০২৩ সালের শেষ দিনে।
উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু মেট্রো রেলপথটি লাইন-৬ নামে পরিচিত। এই লাইনের জন্য ২৪ সেট মেট্রো ট্রেন রয়েছে। ছয়টি বগি নিয়ে একেকটি মেট্রোরেলের সেট তৈরি হয়েছে। এই পথে স্টেশন রয়েছে ১৬টি।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ১৪টি ট্রেন সব সময় লাইনে চলাচলরত অবস্থায় থাকে। তিন সেট ট্রেন বিশেষ প্রয়োজনে লাগতে পারে এই বিবেচনায় প্রস্তুত রাখা হয়। লাইন এবং সংকেত ব্যবস্থা পুরোপুরি ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করার জন্য সকালে একটি ট্রেন যাত্রী ছাড়াই চলে। বাকি ছয় সেট
ট্রেন অব্যবহৃতই থাকে। দুই ট্রেনের মাঝখানের বিরতি আরও কমিয়ে আনলে সব ট্রেনেরই সদ্ব্যবহার হবে। যাত্রী সংখ্যাও আরও বাড়বে বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন। তবে লোকবলের অভাবে আরও ঘন ঘন ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। রাতেও মেট্রোরেলের চলাচলের সময় বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মেট্রোরেলের যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করে প্রায় ২৪৪ কোটি টাকা আয় হয়েছে। ২০২২ সালে আংশিক চালুর পর ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয়েছিল ২২ কোটি টাকার বেশি।
ডিএমটিসিএলের তথ্য বলছে, শুরু থেকে গত জুন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এক কোটি ৭৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯৬৯ জন যাত্রী মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে যাতায়াত করেছে। এর মধ্যে গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় স্টেশনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে দুই মাসের বেশি স্টেশনটি বন্ধ ছিল। নতুবা এই স্টেশন থেকে যাতায়াতকারী যাত্রীর সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতো বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে মেট্রোরেল পরে চালু হয়েছে। ফলে মোট যাত্রী কিছুটা বেশি। তবে ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, গত ছয় মাসের হিসাবেও দেখা গেছে অন্যান্য স্টেশনের তুলনায় মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনে যাত্রী বেশি হয়।
মিরপুর-১০ নম্বর এলাকাটি একটি জংশন। গাবতলী, মিরপুর-১ ও মিরপুর-২ হয়ে অনেকেই মিরপুর-১০ নম্বরে নামেন। সেনানিবাস, মিরপুর-১৪ এবং পূর্বাংশের অনেক মানুষের মিলিত হওয়ার স্থানও এটি। এ ছাড়া আশপাশে বসতি, ব্যবসা ও বাণিজ্যিক স্থাপনাও বেশি। ফলে এই স্টেশনটির যাত্রী সংখ্যা বেশি।