এমন কিছু যে হবে, তা যদিও অনুমান করা গিয়েছিল প্রথম ইনিংস শেষেই। সিরিজের আগের দুই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল যথাক্রমে ১৫২ আর ১৪৮ রান তাড়া করে। কাল একই মাঠে তাদের সামনে আফগানিস্তান দিতে পারে ১৪৪ রানের লক্ষ্য।
আগের দুই ম্যাচেই বাংলাদেশকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল আফগানরা। কাল তেমন কিছু হয়নি। তানজিদ হাসান আর সাইফ হাসানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে তরতরিয়েই এগিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুটা যদিও কিছুটা অস্বস্তিরই ছিল—মুজিব উর রেহমানের প্রথম ওভারটা মেডেনই দিয়েছিলেন পারভেজ হোসেন।
আউট হওয়ার আগপর্যন্ত রানের চেয়ে বলের ব্যবধানটা আর কমিয়ে আনতে পারেননি এই ওপেনার। আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে রশিদ খানের হাতে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে ১৬ বলে ১৪ রান করেন পারভেজ। মেডেন ওভারের পর চতুর্থ ওভারে ২৪ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তাতেও বাংলাদেশের রান তোলার গতি থমকে যায়নি।
পুরো কৃতিত্বটাই সাইফ-তানজিদ জুটির। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভার বাংলাদেশ শেষ করে ৪৭ রান তুলে। ৩৩ বলে ৫৭ রানের জুটি ভাঙে তানজিদ আউট হলে। আবদুল্লাহ আহমেদজাইয়ের আগের বলে জীবন পাওয়ার পরের বলেই তিনি ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন ৩৩ বলে ৩৩ রান করে।
তানজিদের ফিরে যাওয়ার পরও বাংলাদেশকে কক্ষপথেই রাখেন সাইফ। তানজিদের উইকেট নেওয়া আবদুল্লাহর পরের ওভার থেকেই তোলেন ২২ রান। মারমুখী সাইফ প্রয়োজনের সময় হয়ে যান ধৈর্যশীলও। রশিদ খানের ১৫তম ওভারের পুরোটাই তিনি দেন মেডেন!
সেটির পেছনেও অবশ্য একটা প্রেক্ষাপট আছে—রশিদের ওই ওভারের আগে মুজিবের ওভারের শেষ দুই বলে টানা আউট হয়ে গিয়েছিলেন জাকের আলী ও শামীম হোসেন। এই দুই ব্যাটসম্যানের ফেরা ও রশিদের মেডেন ওভার শেষ পর্যন্ত শুধু বাংলাদেশের ম্যাচ জয়ের অপেক্ষাই বাড়িয়েছে। এশিয়া কাপ থেকে বাংলাদেশের ভরসা হয়ে ওঠা সাইফ ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে দলকে জয় পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে মাঠ ছেড়েছেন, ৭ ছক্কা ও ২ চারের ইনিংসে ৩৮ বলে করেছেন ৬৪ রান।
আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের ওপর শুরু থেকে বাংলাদেশের বোলারদের দাপট দেখানোই আসলে গড়ে দিয়েছিল জয়ের ভিত। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম দুই ওভারে ২০ রান তুলে ফেলা প্রতিপক্ষকে পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে তাঁরা ৩৯ রানের বেশি করতে দেননি। এ সময়ে তুলে নেন ৩টি উইকেটও। সেই ধাক্কা আর পুরো ইনিংসজুড়ে সামলে উঠতে পারেনি আফগানিস্তান।
তবু যে আফগানিস্তানের ইনিংসটা এত দূর এগিয়েছে, সেটির কৃতিত্ব দারবিশ রাসুলির। ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৯ বলে ৩২ রান করে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তিনিই। শেষ দিকে ১৮ বলে ২৩ রান আসে মুজিবের ব্যাট থেকে। তবে সাইফউদ্দিনের ৩ আর তানজিম হাসান-নাসুম আহমেদের ২টি করে উইকেটে আফগানিস্তানের রানটা থাকে বাংলাদেশের ধরাছোঁয়ার ভেতরেই।
সেটি ছুঁয়ে প্রথম দুই ম্যাচ জিতেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলা বাংলাদেশ পেল ধবলধোলাই করার স্বাদ। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে যে অভিজ্ঞতাটা খুব বেশি নেই তাদের—আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর এবার তাদের ধবলধোলাই করার তালিকায় নাম উঠল আফগানিস্তানের।
দুই দল এরপর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে, প্রথম ম্যাচ বুধবার।
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৪৩/৯ (রাসুলি ৩২, আতাল ২৮, মুজিব ২৩*; সাইফউদ্দিন ৩/১৫, নাসুম ২/২৪, তানজিম ২/২৪, শরীফুল ১/৩৩, রিশাদ ১/৩৯)।
বাংলাদেশ: ১৮ ওভারে ১৪৪/৪ (সাইফ ৬৪*, তানজিদ ৩৩, পারভেজ ১৪, নুরুল ১০*, জাকের ১০; মুজিব ২/২৬, ওমরজাই ১/১২, আহমেদজাই ১/৫০)।
ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ৩-০–তে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাইফ হাসান।
ম্যান অব দ্য সিরিজ: নাসুম আহমেদ।