সোমবার শেষ দিনে পাঁচ বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এসব সতর্কবার্তা দেন।
দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসাবে এদিন সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারেক রহমান। বিকালে দলের চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে পৃথকভাবে পাঁচ বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
এদিকে চলতি মাসের মধ্যে অন্তত ২০০ আসনে একক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে বলে বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, সভায় তারেক রহমান বলেন, এক আসনে একজন প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। সবাই মনোনয়ন পাবেন না। যারা মনোনয়ন পাবেন না তাদের দল বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করবে।
পাঁচ বিভাগের অন্তত দশজন মনোনয়নপ্রত্যাশী জানিয়েছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে যে ষড়যন্ত্র চলছে, এই পরিস্থিতিতে ভুল-ত্রুটি না করার জন্য নেতাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান। ঐক্যবদ্ধভাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ধানের শীষের পক্ষে সব নেতাকে কাজ করার নির্দেশনাও দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এদিকে যারা মনোনয়ন পাবেন তাদের আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঐক্যবদ্ধ থেকে ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় নির্দেশনা দেন তিনি।
সভায় শুধু তারেক রহমান ও স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বক্তব্য দেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঞ্চালনায় সভায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
বিকাল ৫টা থেকে সিলেট ও খুলনা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ঘণ্টাব্যাপী এই সভায় সিলেট বিভাগে মনোনয়নপ্রত্যাশী ৬৬ জন উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার ৫টি আসনে ১৬ জন, সিলেট জেলার ৬ আসনে ২৬ জন, হবিগঞ্জ জেলার ৪টি আসনে ১৬ জন এবং মৌলভীবাজার জেলার ৪টি আসনে ৮ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত সিলেট ও খুলনা বিভাগের দশজন মনোনয়নপ্রত্যাশী জানিয়েছেন, সভায় তারেক রহমান নেতাদের ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের স্বার্থে দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার পরে কোনো মিছিল, মিষ্টি বিতরণ, ফুল বিতরণ করা যাবে না। এগুলো করলে দলের ঐক্য বিনষ্ট হবে।
সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ বলেন, সভায় বলা হয়েছে-দল একজনকে মনোনয়ন দেবে। দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। খুব তাড়াতাড়ি প্রার্থী ঘোষণা করা হবে জানিয়ে সবাইকে মিলেমিশে কাজ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
খুলনা-৪ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী পারভেজ মল্লিক বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। আর যে ষড়যন্ত্র চলছে, এজন্য সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে বিকাল ৪টা থেকে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারেক রহমান। ঘণ্টাব্যাপী এই সভায় রাজশাহী বিভাগের প্রায় ১০০ মনোনয়নপ্রত্যাশী উপস্থিত ছিলেন। ওদিকে বরিশাল বিভাগের প্রায় ৭০ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী সভায় উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সভায় জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোটারদের উজ্জীবিত করা ও ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য দলের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি তুলে ধরার জন্য নেতাদের নির্দেশনা দেন তারেক রহমান। এছাড়া দেশ, জাতি, গণতন্ত্র, দল এবং নেতাকর্মীদের জন্য গত ১৬ বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ত্যাগ-তিতীক্ষা, নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তারেক রহমান। সর্বশেষ ঢাকা বিভাগীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এর আগে রোববার রংপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদুপরের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন তিনি।
রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম বলেন, সভায় দেশ, জাতি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মনোনয়ন যে নেতাকেই দেওয়া হোক না কেন, ধানের শীষকে জেতাতে হবে।
বরিশাল-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেন, তারেক রহমান দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্য ধরে রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। আর যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।