
নোয়াখালী সদর উপজেলায় ইসলামী ছাত্রশিবির ও যুবদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষ হয়েছে। আজ রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার নেয়াজপুর ইউনিয়নের কাশেমবাজারে জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় মসজিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে এটা নিয়ে এলাকায় দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনার প্রতিবাদে আজ সন্ধ্যায় জেলা শহর মাইজদীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শনিবার বিকেলে নেয়াজপুর ইউনিয়নের কাশেম বাজার জামে মসজিদে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা কোরআন শিক্ষার একটি কর্মসূচি পালন করছিলেন। সেখানে কর্মসূচিতে বাধা দেন স্থানীয় যুবদলের কয়েকজন কর্মী। এটা নিয়ে শিবিরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যুবদলের নেতা-কর্মীদের তর্কাতর্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
আজ বিকেলে আবারও একই মসজিদে ‘দারসে কোরআন’ নামে আরেকটি কর্মসূচির আয়োজন করে ছাত্রশিবির। ওই কর্মসূচি ঘিরে শিবিরের বিভিন্ন ইউনিট থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা মোটরসাইকেলে বিকেলে সেখানে জড়ো হন। আসরের নামাজের পর যুবদল ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা সেখানে গিয়ে মসজিদে রাজনীতি করা যাবে না বলে মর্মে হইচই শুরু করেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়ান। এতে উভয় পক্ষের লোকজনই কমবেশি আহত হয়েছে।
এ ঘটনায় আহত বিএনপি ও যুবদলের আটজন নেতা-কর্মীকে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন বিএনপির কর্মী জিয়াউর রহমান (৪৫), বিএনপির ইউনিয়ন প্রচার সম্পাদক আক্তারুজ্জামান (৫৫), সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন (৬০), সেলিম ইউছুফ আলী (৬৫), দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন (৪৬), মহিন উদ্দিন (৩৬), ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন ওরফে ফারুক (৪৫), সদস্যসচিব ইমাম হোসেন ওরফে রায়হান (৩৫)।
অপর দিকে ছাত্রশিবির দাবি করেছে, সংঘর্ষের ঘটনায় তাঁদের ১৬ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন মো. হাসান (২২), দেলোয়ার হোসেন (২৪), আবিদ (২০), মো. সালাউদ্দিন (১৯), সাইমুন (২০), আব্দুল আজিজ (২৫), তানবির সিয়াম (২৭), সাকিব উদ্দিন ওরফে মাহমুদ (১৪), মিনহাজ মাহমুদ (১৯), মো. বিলাল হোসেন (২৪), হাসানুর রহমান (২৪), মো. সোহাগ (২৪), মো. নাঈম (১৪), আব্দুল আজিজ (২৫), মো. আলামিন (২২), আরিফুল ইসলাম (১৮)।
হাসপাতালে আহত বিএনপি কর্মী জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার বিকেলে শিবিরের কর্মীরা এলাকার শিশু-কিশোরদের মসজিদে এনে তাদের হাতে দলের ফরম দেন। তখন এলাকার লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে গিয়ে প্রতিবাদ জানান। মসজিদে কোনো রাজনীতি করা যাবে না বলে এলাকার লোকজন শিবিরের নেতা-কর্মীদের জানিয়ে দেন। এরপর আজ শিবির জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের দলীয় লোকজনকে নিয়ে সেখানে যায় এবং অতর্কিতে যুবদল ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় বিএনপি ও ছাত্রদলের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন।
অপরদিকে ছাত্রশিবিরের নোয়াখালী উত্তর শাখার সেক্রেটারি মুজাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শনিবার বিকেলে নেয়াজপুর ইউনিয়নের কাশেম বাজার জামে মসজিদে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা পবিত্র কোরআন শিক্ষার একটি কর্মসূচি পালন করছিলেন। সেখানে কর্মসূচিতে বাধা দেন স্থানীয় যুবদলের সভাপতি ফারুকসহ একদল কর্মী কর্মসূচিতে বাধা দেন এবং হামলা চালান। একইভাবে আজ বিকেলে যুবদল ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা আমাদের দারসুল কোরআন অনুষ্ঠানে হামলা চালায়। তাঁরা এ সময় মসজিদে হামলা চালিয়ে মসজিদ ভাঙচুর করে এবং শিবিরের কর্মীদের মারধর করে। এতে শিবিরের ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
ঘটনাস্থলে থাকা সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম সন্ধ্যা সাতটায় বলেন, আগের দিনের সামান্য একটি ঘটনার জের ধরে আজ বিকেলে কাশেম বাজারে ছাত্রশিবির ও যুবদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে থানা-পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল রয়েছে।











